25/04/2024 : 10:24 AM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

e-জিরো পয়েন্ট – আষাঢ় ১৪২৭ (আষাঢ়ে ভূতের  আড্ডা)

গল্প


রায় বাড়িতে ভূত আছে

✒স্বাতী মুখার্জী

এ্যাঁ সেকি কথা? রায় বাড়িতে ভূত আছে? কোথায়? আজ চল্লিশ বছরের বাস আমাদের এই পাড়ায়, এমন কথা তো কেউ কখনও বলে নি? তাছাড়া ,,,, ওদের বাড়িতে গিজগিজে লোক। এঘর ওঘর শরিকে শরিকে থিকথিক করছে। হাঁটাচলা করতে গেলে ধাক্কা লাগে। রোজদিনই বিয়ে বাড়ির হুল্লুড়। আজ এর জন্মদিন, তো কাল ওর মেয়ে দেখা , তো পরশু আবার কার না কার পাশের খাওয়া,,,, লেগেই আছে। ওদের ন ঠাকমা রাত সাড়ে বারোটায় হেঁসেলে তালা ঝুলিয়ে ঘুমুতে যায় তো বড় ঠাকমা রাত সাড়ে তিনটেয় উঠে সিদ্ধভাত চড়ায় তার নাতি ফার্স্ট ট্রেন ধরে। ওদের বাড়ি ভূত থাকবে কোত্থেকে বলো তো? __ একটানে এত গুলো কথা বলে অমিয়কে কথা বলার স্কোপ দিলেন পড়ার বয়ঃ জ্যেষ্ঠ সরকার বাবু।

অমিয় এপাড়ার নতুন বাসিন্দা। রায়বাড়িতেই ভাড়া এসেছে। বলল,” ভূত মানেই কি আর মানুষ ভূত? রায়বাড়িতে পোকামাকড়ের ভূত থিক থিক করছে।”

সরকার মশাই হতভম্ব। “পোকা ভূত? সে কেমন?”

অমিয় বলল,” সে আর কেমন, ঐ, দেওয়াল ভর্তি গিজগিজে পিঁপড়ে, লাইন বেয়ে উঠছে, আপনি আঙুল দিয়ে পিষতে যান, দেখবেন একটাও নেই। সেদিন দুটো টিকটিকির কি ঝুটোপাটি! একটা স্কেল উঁচিয়ে ধরতেই ভ্যানিশ। এইরকম অনেক উদাহরণ আছে। কত আর বলব , ভূত ছাড়া আবার কি, পোকা ভূতদের সাথে থাকতে পারি, অসুবিধে নেই, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে কোনটা ভূত আর কোনটা আসল বুঝবো কি করে? সেদিন ঘুমোনোর আগে দেখলাম বেশ কিছু মশা ঘরে। সারাদিন থাকি না। দরজা জানলা বন্ধ। মশা ঢোকে কি করে? ভূত ভেবে পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে দেখি রক্ত খেয়ে সব ঢোল। সব কটাকে মেরে তাদের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটালাম। নে এবার কত ভূত হবি হ। এই হয়েছে ঝামেলা। বুঝলেন?”

সরকার মশাই বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়ে বললেন,”তা তুমি এসব কথা রায় কর্তাকে জানাও নি? ওবাড়ির বড় তরফ মেজো তরফ কাউকেই জানাও নি?”

অমিয় মুখটা কেমন একটা করে বলল,” ওরা বড্ড একা সেরে লোক। বুঝলেন না? আমার সাথে তেমন মেশেই না। আমাকে দেখলেই যেন পালাই পালাই ভাব।‌ ভাড়াটে বলে কি মানুষ না? নাকি ভাড়াটের সাথে কথা বলা বারণ? ভাড়াটের সাথে কথা বলা মানেই কি সে অভাব অভিযোগ জানাতে থাকবে? ওরা আমাকে এড়িয়েই চলেন। কিন্তু কাউকে তো জানাতে হবে? আপনি পাড়ায় বয়ঃজ্যেষ্ঠ। তাই আপনাকে বললাম।”
সরকার মশাই,,”তা বেশ করেছো, বেশ করেছো, ” বলে সেদিনের মতো চলে গেলেন।”

কিন্তু ঐ যে। বয়ঃজ্যেষ্ঠ বলে কথা। আর মন থেকে তো পোকা ভূতদের ব্যাপারটা যায় নি। নাঃ রহস্যের একটা সমাধান দরকার।‌ অতএব তিনি এক রবিবার সকালে হাতে একটু সময় নিয়ে গেলেন রায় বাড়ি‌। ও বাড়ির বড় তরফ, মেজো তরফ দু’জনেই উঠোনে দাঁড়িয়ে একটা জটিল বিষয়ের আলোচনা করছে। মাঝে মাঝে বড়ো ঠাকুমা হাত পা নেড়ে কি বুঝিয়ে যাচ্ছে। সরকার মশাইকে দেখে দুই তরফই খুশি হয়ে ‘আসুন আসুন’ বলে বেতের চেয়ার দেখিয়ে দিলেন। দু’জনেই ভাবলেন, নাতনির বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসেছেন বুঝি। সরকার বাবু কুশল সংবাদ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”তার তোমাদের পেছোনের ঐ বাগানের ঘরে সেই একজন ভাড়াটে এলো তার খবর কি? ভালোভাবে আছে তো? পাড়ায় নতুন!”

রায়বাড়ির দুই তরফ এ ওর দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিলো। তারপর মেজো তরফ গলা নামিয়ে বলল,”তার একটু মাথার ব্যামো আছে। সে রাতদিন পোকা ভূত দেখে। আমরা তাকে এড়িয়ে চলি।”
সরকার মশাই কিচ্ছু না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলেন,”কি রকম?”

মেজো চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে গলা নামিয়েই বলল,” আরে পাড়ায় কোথাও কোনও বাগান সমেত বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট উঠছে দেখলেই গজগজ করে বলতে থাকে,’এত খুন আর সহ্য হয় না।’ আমার ছোট নাতি জিজ্ঞেস করল,’কোথায় কারা খুন হল?’ তখন দেখি বলে,’ এই আবার গাছ কেটে বাড়ি ভেঙে সব কুঠুরী তৈরি হচ্ছে। পোকামাকড় গুলো মারা গিয়ে ভূত হয়ে যাচ্ছে। ভূত হয়ে যাচ্ছে সব।’ ওসব শোনার পর থেকে সাবধানে থাকি আমরা। পোকাদেরও নাকি ভূত। ভাবুন দেখি। রাতদিন সে ঘরের মধ্যে পোকাদের ভূত দেখে।”

চা খেয়ে চলে এলেন সরকার বাবু। তা হাইরাইজ একটা দু’টো হচ্ছে বটে এপাড়াতেও। কিন্তু তাই বলে রায়বাড়িতে ভাড়াটে অমিয়র ঘরে গিয়ে জড়ো হচ্ছে পোকা ভূত? তা হবে। এরকম ভূতের ভয় যদি ইয়ং জেনারেশন এর সবার থাকতো এত হাই রাইজের কুঠুরী তৈরি হতো না। বাস করে কয় জন? কত ঘর ই তো তালা বন্ধ পড়ে থাকে। গাছ তেমন নেই এখন এপাড়ায়। আগে রাস্তাটায় দু তিনটে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া পড়তো, লাল লাল ঝরা পাপড়ি নিয়ে। এখন রায়বাড়ির পেছোনের বাগানেই এপাড়ার সবচেয়ে বেশি গাছ আছে। থাক বাবা থাক। পোকা ভূতের বাড়ি হয়েও থাক। কবে আবার ওদের বাড়িটাও ফ্ল্যাট হয়ে যাবে।‌ অমিয়র মতো পাগলদের তখন আরো গ্রাম দেখে উঠে যেতে হবে। ♦

◆এই সংখ্যাটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য করুন নীচের কমেন্ট বক্সে।◆

Related posts

জিরো পয়েন্ট লিটল ম্যাগাজিন

E Zero Point

নতুন বছরের শুরুতে পুরুলিয়ায় বৃত্তি প্রদান ও পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান

E Zero Point

প্রচণ্ড ঠাণ্ডা – আগুন জ্বেলে শরীর উত্তপ্ত করতে ব্যস্ত ওরা

E Zero Point

1 টি মন্তব্য

আব্দুল হিল শেখ June 21, 2020 at 8:05 am

অসাধারণ লাগলো। ভালো থাকবেন সকলে।

উত্তর

মতামত দিন