19/04/2024 : 11:15 AM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

|| বাজলো তোমার আলোর বেণু || e-জিরো পয়েন্ট – আশ্বিন ১৪২৭

গল্প


বাড়িতে যখন দুর্গা

✒ ডঃ রমলা মুখার্জী
মায়ের অমতে সৌরভ রেজিস্ট্রি বিয়ে করে বৌ মিতাকে নিয়ে ঘরে পা দিতেই সরমা ঝংকার দিয়ে উঠল,
“মা গো, কি ঘেন্না ! তোর কপালে শেষে কিনা একটা আয়া জুটলো?”
 মিতার ছোঁয়া খাবার, জল কিছুই খান না সরমা। মিতা মনে মনে কষ্ট পেলেও মুখ বুজে সব সহ্য করে। আলাদা করে নিজের মত দুটো ভাতে ভাত ফুটিয়ে খায় মিতা। সৌরভ বলে, “দেখো মিতা, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। মায়ের সূচিবাইটা একটু মানিয়ে নাও। আর যদি তোমার খুব অসুবিধা হয় তো বল আলাদা থাকি।”
মিতা বলে, “না না, তুমি মায়ের একমাত্র সন্তান, ওনাকে ফেলে আমাদের যাওয়া উচিত হবে না। তাছাড়া আলাদা থাকলে বাড়ি ভাড়াতেই তো কত টাকা চলে যাবে। আমাদের দুজনের রোজগারে যাহোক করে সংসারটা চলে। মায়ের দুধ, ফল, ওষুধ কি করে তখন কিনবে? তুমি আমার জন্যে একদম চিন্তা করো না।”
তবু মায়ের ব্যবহার সৌরভের মনে একটা অপরাধ বোধের জন্ম দেয়। সব সময় সরমার এই দুই দুই ভাব তাকে পীড়া দেয়। সরমাকে সৌরভ বোঝাতে গেলেই অশান্তির ঝড় ওঠে।
      মাস দুই পরে সরমার হঠাৎ এল ধুম জ্বর; গলায় খুব ব্যথা। পরীক্ষা করে দেখা গেল সরমা কোভিড পজিটিভ। মিতাই এখন ভরসা, দিনরাত সে সেবা করে সরমার। কিন্তু সরমার জ্বর কিছুতেই কমছেনা, শরীরের অবস্থাও ভালো নয়, খুব দুর্বল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মিতা একটা অক্সিমিটার ফ্লিপ কার্ডে আনিয়ে রেখেছিল ডাক্তারবাবুদের পরামর্শে। মিতা ঐ যন্ত্রে দেখে সরমার অক্সিজেন লেভেল একানব্বই। মিতা জানে অক্সিজেন লেভেল তিরানম্বইয়ের নীচে নামলেই সমূহ বিপদ। সঙ্গে সঙ্গে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া করে মিতা সরমার নাকে অক্সিজেন সংযোগ করে। শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি  পায় সরমা। কিছুক্ষণ পরে একটু সুস্হ হলে মিতা যে হসপিটালে কভিড রুগীদের দেখভাল করে সেখানকার ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করে একটি বেডের এবং স্হানীয় পুলিশের তৎপরতায় তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে ঐ হসপিটালেই ভর্তি করে দেয় সরমাকে। ক’দিন যমে-মানুষে লড়াইয়ের পর সে যাত্রা প্রাণে বাঁচে সরমা। দিন সাতেক পরে হসপিটাল থেকে সরমা বাড়ি ফেরে। অভিজ্ঞা আয়া বৌ মিতার সহানুভূতির স্পর্শ আর সহযোগিতায় বয়স্কা সরমা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে দৈহিক ও মানসিকভাবে।
   সামনেই পুজো, সরমা মনে মনে ভাবে, “আমার বাড়িতেই দশভূজা এসেছে, দুই হাতে ঘরে বাইরে বৌমা যে অক্লান্ত সেবা দান করে চলেছে তাকে তো দেবী দুর্গার আসনে বসাতেই হয়। এবার আমার অন্য পুজো, আমায় চৈতন্য  দিয়েছে আমার বৌমা, তাকেই করবো পুজো।”
    সরমার মনের এই পরিবর্তনের অপেক্ষাতেই তো ছিল সৌরভ, সে তো জানে প্রতিটা মেয়েই এক একটি দুর্গা। তাই সে ভাবলো, “মায়ের এই নবরূপ তো ত্রিনয়নী মা দুর্গার আর এক রূপ। তৃতীয় নয়নের আলোয় মা আজ উদ্ভাসিতা।”♥

Related posts

কবিতাঃ অস্তিত্ব

E Zero Point

দৈনিক কবিতাঃ দেশপ্রেমিক ক্ষুদিরাম

E Zero Point

স্মৃতির আলোয়-১ : সুরতে খুবসুরত বাঙালি – অশোক মৈত্র

E Zero Point

মতামত দিন